,

‘দশ গুণ ভালোরা হারিয়ে গেছে, ভিক্ষা করেছি, ভুল পথে হাঁটিনি’

সময় ডেস্ক : ব্রাজিলিয়ান প্রতিভা মানেই নির্মম অতীত। যেখানে ক্ষুধা, অভাব, মাদকের নেশা কিংবা পেশায় বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার গল্প। পেলে-গারিঞ্জা থেকে রোনালদিনহো। ফিরমিনো-রিচার্লিসন, অ্যান্তোনি কিংবা রাফিনহা; তাদের বেড়ে ওঠার গল্প যেন বৃত্তের এক বিন্দুতে শুরু।
কদিন আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেওয়া ব্রাজিলিয়ান রাইট উইঙ্গার অ্যান্তোনি জানিয়েছেন, তার বুট কেনার অর্থ ছিল না। থাকার জন্য ভালো ঘর ছিল না তাদের। ভাই-বোন মিলে কতো রাত একসঙ্গে কেঁদেছেন তারা। এবার বার্সেলোনায় যোগ দেওয়া রাফিনহা তার নিষ্ঠুর ছেলেবেলার গল্প শোনালেন।
ইউএলও স্পোর্তোয় এক কলামে রাফিনহা লিখেছেন, ১২-১৪ বছর বয়সে অন্যর কাছে খাবারের জন্য হাত পেতেছেন তিনি। সহজে অর্থ আয় করতে মাদক চক্রে পা বাড়িয়েছে অনেকে। তার চেয়ে ১০ গুণ ভালো খেলত, তার এমন অনেকে বন্ধু হারিয়ে গেছে। কিন্তু তিনি পথ হারাননি।
রাফিনহা লিখেছেন, ‘একটা সত্য বলা দরকার, বিষয়টি একটু জটিলও। আমি পোর্ত এলেগ্রির রেস্তিংগা থেকে উঠে এসেছি। আমার মতো শহরতলীতে বেড়ে ওঠাদের জন্য ফোকাস ঠিক রাখা খুবই কঠিন। লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। সামনে অনেক সুযোগ এসেছিল, তারা খুব সহজে অর্থ আয়ের পথ দেখিয়েছিল। ওই পথে অনেকে হারিয়ে গেছে। আমি ওই পথে না হাঁটলেও একজন সাক্ষী। একসঙ্গে বড় হয়েছি, এমন অনেকে হারিয়ে গেছে।’
ব্রাজিলে মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরে বাঁ-পায়ের এই উইঙ্গার বলেন, ‘অপরাধের জগতে, মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে যাওয়ায় অনেক বন্ধুকে হারিয়েছি আমি, এমন বন্ধু যারা আমার থেকে ১০ গুণ ভালো খেলত। যাদের আজ বিশ্বের সেরা সব ক্লাবে খেলার কথা ছিল। এসবের সাক্ষী হওয়া আমাকে ফোকাস ঠিক রাখতে সহায়তা করেছে। খুব ছোট থেকেই জানতাম, আমাকে ফুটবলার হতে হবে। আজ যদি আমার ফুটবল ম্যাজিক নিয়ে কেউ কথা বলে, আমি বলবো ওই জীবনটাই আমার আসল ম্যাজিক।’ তার বাবা ছিলেন একজন গায়ক। কিংবদন্তি রোনালদিনহোর সঙ্গে তার বাবার বন্ধুত্ব ছিল। সংসার চালানোর মতো অর্থ তার বাবা আয় করে আনতেন। বাড়িতে খাবারের অভাব ছিল না ঠিক তবে অর্থের প্রাচুর্যও ছিল না। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ব্রাজিলিয়ান তরুণের তাই খাবারের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হয়েছে।
সেই বর্ণণা দিয়ে রাফিনহা বলেন, ‘ঘরে খাবার ছিল না বলে ক্ষুধার্ত থেকেছি একথা বলা অনৈতিক হবে। তারপরও অনুশীলনের পর আমি খাবারের জন্য হাত পেতেছি। কেউ হালকা কিছু কিনে দিতেন, অনেকে আবার মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতেন। তখন কিছুই করার থাকতো না, ক্ষুধার্ত পেটে বাসের জন্য অপেক্ষা করা এবং বাড়ি ফিরে খাবারের আশা নিয়ে থাকতে হতো। তখন বয়স কতোই বা হবে, ১২ থেকে ১৪।’
ওই রাফিনহা চলতি মৌসুমে প্রায় ৬০ মিলিয়ন ইউরোয় স্বপ্নের ক্লাব বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছেন। পর্তুগালের স্পোর্টিং সিপি, ফ্রান্সের রেঁনেস ঘুরে ২০২০ সালে প্রিমিয়ার লিগের লিডস ইউনাইটেডে যোগ দেন তিনি। এরপর স্বপ্নের দিকে ছুটতে থাকেন। ব্রাজিলের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে। গায়ে চড়েছে বার্সার জার্সিও। তবে এখনও তার ছোঁয়া হয়নি অনেক কিছু। রাফিনহা জানেন, যেতে হবে বহুদূর।


     এই বিভাগের আরো খবর